চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার, খুশকি ও চুল পড়ার সমাধান

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার অপরিহার্য। কারি পাতায় রয়েছে প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপাদান। যা আপনার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং খুশকি দূর করতে সহায়তা করে। কারি পাতা আয়ুর্বেদিক প্যাক বা তেল তৈরিতেও ব্যবহার হয়ে থাকে।

চুলের-যত্নে-কারি-পাতার-ব্যবহার

চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কারি পাতার ব্যবহার শতাব্দি ধরে চলে আসছে। চুলের যত্নে বরাবরই কারি পাতার কদর সবথেকে বেশি। তাই চলুন আমরা চুলের বৃদ্ধি চুলের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

কারি পাতার পুষ্টি উপাদানের জন্য চুলের একাধিক যত্নে কারি পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। কারি পাতার মধ্যে এমন বিশেষ উপাদান রয়েছে যা আপনার চুল এবং মাথার ত্বকের যত্ন নেয়। যে কারণে আয়ুর্বেদিক প্যাক এবং তেল বানাতেও কারি পাতা ব্যবহার করা হয়। চলুন তাহলে চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই।
  • কারি পাতা, মেথি পাতা ও আমলকিঃ আধা কাপ পরিমাণে কারি পাতা, মেথিপাতা ও আমলকি একসঙ্গে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর এই পেস্টটি চুলে লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুল গজানো শুরু করবে।
  • কারি পাতা ও নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেলের মধ্যে কিছু কাঁচা কারি পাতা দিয়ে অল্প তাপে কিছুক্ষণ গরম করুন। তারপর নামিয়ে ঠান্ডা হলে চুলে ব্যবহার করুন। এই তেল নিয়মিত মাথার ত্বক এবং চুলে ব্যবহার করুন। চুলের পরিবর্তন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
  • কারিপাতা ও পেঁয়াজঃ কারি পাতা ও পেঁয়াজ একসঙ্গে বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন। তারপর এর রসটুকু ছেঁকে বের করে নিন। এরপর এই রস চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন এবং ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি চুল পড়া প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
  • কারি পাতা ও টক দইঃ চুল পড়া বন্ধে কার্যকরী প্যাক গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কারি পাতা ও টক দই এর প্যাক। কারি পাতা ও টক দই একসঙ্গে পেস্ট করে 20 থেকে 30 মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। চুল পড়া রোধের পাশাপাশি দেখবেন চুল সিল্কি এবং হেলদি হয়েছে।
  • পান পাতা ও জবা ফুলঃ কারি পাতা ও জবা ফুল একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর চুলে ৪০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া বন্ধে এই প্যাকটি খুবই উপকারী।

কারি পাতা ব্যবহার করে চুল লম্বা করার উপায়

আমাদের মাথার চুল লম্বা করতে কারি পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেই কারি পাতার বিশেষ ব্যবহার যার মাধ্যমে আমাদের চুল হবে অনেক লম্বা।
  • কারি পাতার চাঃ কারি পাতার চা আমাদের চুল ভালো রাখতে এবং লম্বা করতে সাহায্য করে। শুনতে অবাক লাগলেও কারি পাতার চা আমাদের জন্য খুবই উপকারী। প্রথমে কারি পাতা ফুটিয়ে নিন। তারপর এর সঙ্গে লেবুর রস ও চিনি যোগ করুন। নিয়মিত এই চা খেলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চুল দ্রুত লম্বা হতে থাকে। পাশাপাশি এই চা চুল পাকা রোধ করতেও সহায়তা করে।
  • হেয়ার টনিকঃ নারিকেল তেলের মধ্যে কারি পাতা দিয়ে ফুটিয়ে হেয়ার টনিক তৈরি করুন। এই তেলটি চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর এক ঘন্টা রেখে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করুন। এর ফলে আপনার চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
  • হেয়ার মাস্কঃ কাঁচা কারি পাতা পেস্ট করে নিন। তারপর এই পেস্টটি চুলে এবং মাথার তালুতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুল দ্রুত বাড়বে। তার পাশাপাশি ঘন ও সিল্কি হবে।
আরো পড়ুনঃ

চুল পড়া রোধে কারি পাতার তেল

কারি পাতার তেলের এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কারি পাতার তেল দিয়ে নিয়মিত মাথার তালু ম্যাসাজ করলে চুলের ফলিকনে রক্ত সঞ্চালিত হয়। যা মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। এই তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যকর চুল তৈরি হয়। 

তবে এর কার্যকরী ফলাফল পেতে হলে আপনাকে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাসও লেগে যেতে পারে। আপনারা চুলে কারি পাতার তেল ব্যবহার করার কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে পারেন। যেমনঃ

নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল এর সঙ্গে কারি পাতার তেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। আপনার চুলকে ভাগ করে নিন এবং কারি পাতার তেল মাথার তালুতে লাগান। তারপর আলতো করে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার পরে তেলটি কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা বা আরও ভালো ফলাফলের জন্য সারারাত লাগিয়ে রাখুন। 

হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সাথে শ্যাস্পুও ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের-যত্নে-কারি-পাতার-ব্যবহার

চুল পড়া প্রতিরোধে কারি পাতার পুষ্টিগুণ

আমরা অনেকেই নিত্যদিনের খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য কারি পাতা ব্যবহার করে থাকি। কারি পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। কারি পাতা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখতে, রোগ প্রতিরোধ করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সহযোগিতা করে। কারি পাতা আমাদের চুল পড়া প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে। কারি পাতার উপকারিতা জানতে কারি পাতার পুষ্টিগুণ জানাও জরুরী। কারি পাতার বিশেষ পুষ্টিগুণ গুলো হলোঃ
নাম পুষ্টিগুণ
ভিটামিন এ, বি, সি, ই
খনিজ পদার্থ আয়রণ, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম
এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক যৌগ
অ্যামিনো এসিড প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিল্ডিং ব্লক

আমরা কারিপাতার যে বিশেষ ঔষধি গুনাগুন রয়েছে তা উপেক্ষা করতে পারিনা। চলুন আমরা ১০০ গ্রাম পরিমাণ তাজা কারি পাতার পুষ্টিগুণের পরিমাপ সম্পর্কে জেনে নেই-
পরিপোষক প্রতি ১০০গ্রাম পরিমাণ
শর্করা ১৮.৬ গ্রাম
ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম
প্রোটিন ৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৮৩০ মিলিগ্রাম
বিটা ক্যারোটিন ৭৫৬০ ug
আয়রন প্রায় ১ মিলিগ্রাম
শক্তি ৭৬৬ কিলোক্যালোরী
ভিটামিন B6 ৬.০৪ মিলিগ্রাম
তন্তু সামান্য পরিমানে

ঘন কালো চুলের জন্য খাবারের তালিকায় যোগ করুন কারি পাতা

ঘন কালো চুল পেতে কারি পাতা খাবারের তালিকায় যোগ করতে পারেন। অর্থাৎ কারিপাতা আপনার শরীর গ্রহণের মাধ্যমে চুলে পুষ্টি পৌঁছে দিবে। চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে আপনি নিয়মিত খাবারের তালিকায় কারি পাতা রাখতে পারেন। প্রতিদিনের খাবারে কারি পাতা খাওয়ার কিছু কার্যকরী নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-

কারি পাতা রোদে শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে চা হিসেবে খেতে পারেন। কুচি করা কারি পাতা দুধের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। যেকোনো তরকারিতে কারি পাতা খেতে পারেন।  তাতে তরকারির স্বাদও বৃদ্ধি পাবে। কারি পাতা ভেজে নিয়ে ভাতের সঙ্গে সবজি হিসেবে খেতে পারেন। কাঁচা কারি পাতা জাল করে সেই পানি টনিক হিসেবে খেতে পারেন।

চুলের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা 

কারি পাতা হল চকচকে এবং সুগন্ধযুক্ত এক ধরনের পাতা। যা রান্না করা খাবার কে আরো সুস্বাদু করে তোলে। তার সাথে চুলের যত্নের শক্তিশালী এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে এই কারি পাতা। এখন আমরা চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

  • কারি পাতায় রয়েছে উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ। যা মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের সমস্যা হতে পারে এমন ঘাটতি পূরণ করে। তাই কারি পাতা ব্যবহারে চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
  • মাথার ত্বকের সঠিক ph ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে চুলে খুশকি, চুলকানি এবং মাথার ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর হয়।
  • কারি পাতা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। যার ফলে চুল হয় সিল্কি, মসৃণ ও জটমুক্ত।
  • কারি পাতা চুলের গোড়া মজবুত করে । মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন সঠিক পরিমাণে রাখায় চুল পড়া রোধ করে।
  • অনেকেরই হরমোন জনিত কারণে চুল পড়ে। কারি পাতায় এমন উপাদান রয়েছে যা হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে চুল পড়া কমে যায়।
  • কারি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এন্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
  • অনেক সময় মাথার ত্বকে জালা বা চুলকানি হয়ে থাকে। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে। এই সমস্যার সমাধানেও কারি পাতা ব্যবহার করা যায়। যার ফলে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়।
চুলের-যত্নে-কারি-পাতার-ব্যবহার

সমসাময়িক প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্নঃ কারি পাতা চুলে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
উত্তরঃ কারি পাতা নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গরম করে সেই তেল ছেঁকে নিয়ে মাথার চুলে ব্যবহার করুন। কারি পাতা পেস্ট করে প্যাক বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

প্রশ্নঃ কারি পাতার রস চুলে দিলে কি হয়?
উত্তরঃ কারি পাতার রস চুলে দিলে সেটা চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুল পড়া বন্ধ করতে, চুল গজাতে, খুশকি দূর করতে এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর করতে সহায়তা করে।

প্রশ্নঃ চুল গজানোর জন্য কারি পাতা ও মেথির ব্যবহার?
উত্তরঃ কারি পাতা ও মেথির মিশ্রণ পেস্ট করে চুলে দিলে চুল ঘন হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুল সিল্কি হয়।

প্রশ্নঃ চুল গজানোর জন্য কোন পাতা ভালো?
উত্তরঃ চুল গজানোর জন্য কারি পাতা খুবই উপকারী। কারি পাতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুল গজাতে সহযোগিতা করে।

প্রশ্নঃ চুল গজানোর প্রাকৃতিক উপাদান কোনটি?
উত্তরঃ কারি পাতা, পেঁয়াজের তেল, রোজমেরি, এলোভেরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান চুল গজানোর জন্য খুবই উপকারী।

প্রশ্নঃ কিভাবে চুল গজানো যায়?
উত্তরঃ পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, চুলের নিয়মিত পরিচর্যা, মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় তেল মালিশ ইত্যাদি ভাবে চুল গজানো যায়।

প্রশ্নঃ কোন চা খেলে চুল ঘন হয়?
উত্তরঃ কারি পাতার চা বা রোজমেরি চা খেলে চুল ঘন হয়।

প্রশ্নঃ কারি পাতা কতদিন খেলে চুল গজায়?
উত্তরঃ কারি পাতা নিয়মিত ভাবে তিন মাস পর্যন্ত খেলে এবং ব্যবহার করলে চুল গজায়।

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে লেখক এর মন্তব্য

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই ভালো ধারণা পেয়েছেন। আমরা অনেকেই অনেক দামি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করি। কিন্তু সে হিসেবে কারি পাতা প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য হেয়ার প্যাকের অন্যতম উদাহরণ। কারি পাতার মধ্যে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা আপনার চুল এবং মাথার ত্বকের যত্নে খুবই কার্যকরী।

কারি পাতার এইসব গুণের কারণে আয়ুর্বেদেও কারিপাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই আমার মতে, আপনি উপরোক্ত নিয়ম মেনে কারি পাতা ব্যবহার করুন। আর আপনি পান স্বাস্থ্যকর, ঝলমলে, লম্বা, ঘন ও সিল্কি চুল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url