গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা, যেসব কারণে রোজা কাজা করা যাবে
গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা, যেসব কারণে রোজা কাজা করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা করব। নারী-পুরুষ সকলের উপরে রোজার বিধান সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজটি আদায়ের বিষয়ে কিছু সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে রোজা কাজা করা বা ভাঙ্গার কিছু সুযোগ রয়েছে।
আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা এবং যেসব কারণে রোজা কাজা করা যাবে তা সম্পর্কে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য শরীয়তে কিছু সুযোগ রয়েছে যেটাকে বলা হয় রুখসত, যার অর্থ হল ছাড়। চলুন পুরো আর্টিকেলটিতে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা
- গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা
- গর্ভাবস্থায় যেসব কারণে রোজা কাজা করা যাবে
- গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় রোজার বিধান
-
গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখলে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবে
- সমসাময়িক প্রশ্ন উত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা
গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা
গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে আগ্রহী।
কাফফারা হলো পাপ বা অপরাধ থেকে মাপ পাওয়ার জন্য তওবা কবুলের উদ্দেশ্যে
অভাবগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য অর্থ বা খাবার সমন্বিত একটি ধর্মীয়
অনুদান। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর রোজা ফরজ। ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা না
রাখা বা ভেঙ্গে ফেলা খুবই গুনাহের কাজ। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ইসলামে রোজা
ভাঙ্গার বিষয়ে শিথিল করা হয়েছে। কোন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি
ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের রোজা না রাখে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলে বা
রোজা ভাঙ্গার জন্য কোন ওজর থাকে তাহলে তাকে ঐ রোজার কাজা আদায় করতে হয়।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় রয়েছে। যদি গর্ভবতী নারী বা
তার বাচ্চার কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তবে রমজান মাসে রোজা না রেখে তা কাজা আদায়
করে নিতে পারবে, এক্ষেত্রে তাকে কোন কাফফারা দিতে হবে না। তিনি সুস্থ
হলে যদি কাজা রোজা করতে না পারেন বা রোজা করতে অক্ষম হন সে ক্ষেত্রে
তিনি ফিদিয়া আদায় করতে পারেন। ফিদিয়া পালনের নিয়ম হলো একজন মানুষকে
একবেলা করে খাওয়াতে হবে। সন্তান প্রসবের সময় রোজা রাখা জায়েজ নেই।
তবে সেই দিনগুলোর রোজা আপনাকে কাজা দিতে হবে। তবে শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়া যদি
কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা সহবাসের কারণে রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে তাকে সেই রোজার
কাজা এবং কাফফারা দুইটাই দিতে হবে। আপনি কি লাগাতার সাত দিন রোজা রাখতে
হবে। পানাহার ও সহবাস ছাড়া যদি কোন পদ্ধতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভাঙ্গে
তাহলে কাফফারা দিতে হবে না, শুধু কাজা রোজা করলে চলবে।
আপনারা কাফফারা আদায়ের সময় ৬০ দিন রোজা রাখা পূর্ণ হওয়ার আগে যদি একদিন বাদ
যায় তাহলে আবার শুরু থেকে আরম্ভ করতে হবে। আর আগের রোজাগুলো বাদ হয়ে
যাবে। আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিকবার রোজা ভাঙেন সে ক্ষেত্রে এক কাফফারায়
আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য আপনি ৬০ দিন রোজা
রাখতে পারেন বা ৬০ জন মিসকিনকে দুবেলা খাবার খাওয়াতে পারবেন অথবা সমপরিমাণ
সম্পদ সাদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় যেসব কারণে রোজা কাজা করা যাবে
গর্ভাবস্থায় কোন নারীর যদি নিজের বা গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে
সে রোজা কাজা করতে পারবে। গাইনি ডাক্তারদের মতে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের
থেকে অনেক বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। তাই একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয়বার
বা তারও বেশি খাবার খেতে বলা হয়। দীর্ঘ সময় খাবার খেয়ে না থাকা একজন
গর্ভবতী মায়ের জন্য কষ্টকর বিষয়। তাছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর ঘেমে যায় এবং
ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয়।
এমনকি পেটের সন্তান অপুষ্টি ও কর্মযোগ নিয়ে জন্মানো সম্ভাবনা থাকে। আবার
অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের মূত্রনালীর ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে
গর্ভবতী মা রোজা কাজা করতে পারবেন।পরবর্তীতে তিনি সুস্থ হলে কাজা রোজা আদায় করে
নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কাফফারা আদায় করতে হবে না। প্রসব পরবর্তী সময়ে
দুগ্ধ দানকারী নারীদেরও একই বিধান রয়েছে। তারা রোজা কাজা করতে
পারবে, কিন্তু পরবর্তীতে সেই কাজা রোজা আদায় করে নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
গর্ভাবস্থায় মায়েদের মনে রোজার সময় অনেক ধরনের চিন্তার উদয় হয়। একদিকে
রোজার সময় গর্ভের সন্তান নিয়ে চিন্তাভাবনা, অন্যদিকে রোজা রাখা নিয়ে খুবই
চিন্তিত। রোজা রাখতে পারবেন কিনা সেটা মূলত নির্ভর করছে আপনার
উপরে। আপনি যদি যথেষ্ট সত্য সামর্থ্য হন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
রোজা রাখতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মত ডায়েট ফলো করতে হবে।
গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা যায়, গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা রাখা ঠিক
না। কারণ গর্ভবস্থায় মায়ের কাছ থেকে শিশুর শরীরে খাবার যায়। আর
গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক অনেক ধরনের সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি রোজা না
রাখলেও পারবেন। এ সময় অনাগত শিশুর এবং মায়ের শরীরে পুষ্টি, ভিটামিন,
ক্যালসিয়াম, পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা জরুরি। যা রোজা রাখলে সম্ভব
হয় না।
আবার গর্ব অবস্থায় মায়েদেরও স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে ক্যালরি প্রয়োজন
হয়। সেজন্য গর্ভবতী মায়েদের দিনে কমপক্ষে ছয় বার বা তারও বেশি খাবার
খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তারগণ।ইসলামেও গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখার উপর শিথিল
করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় মায়েরা রোজা না রাখলেও পারবেন। তবে
পরবর্তীতে সেই রোজার পরিবর্তে তাকে কাজা রোজা করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোজার বিধান
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা নিয়ে গর্ভবতী মা এবং আপনজনরা অনেক দুশ্চিন্তায়
থাকে। তাদের অনাগত সন্তান এবং গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা নিয়ে তাদের মাথায়
অনেক প্রশ্ন থাকে। একজন গর্ভবতী মা যদি শারীরিক দিক দিয়ে ফিট হয় এবং মনোবল
দৃঢ় থাকে তাহলে তিনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারবেন। তবে
ইসলামিক শরীয়তে গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা শিথিল করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা মায়ের কাছ থেকে খাবার গ্রহণ করে তাই মাকে সবসময় ঘন ঘন
খাবার খেতে বলা হয়। রোজা রাখার ফলে অনেক সময় পুষ্টিহীনতা এবং পানি শূন্যতা দেখা
দেয়। আপনার শারীরিক কোন অসুস্থতা হলে বা বাচ্চা এবং মায়ের কোন সমস্যা হওয়ার
ভয় থাকলে আপনি রোজা নাও করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে পরে কাজা রোজা করতে হবে,
আপনারা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখলে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবে
গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে অনেক সাবধানতা এবং
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ নিয়ম-কানুন না মেনে চললে বাচ্চা এবং মায়ের
জন্য ঝুঁকি হতে পারে। গর্ভবতী মায়েরা যেসব নিয়ম কানুন বা সর্তকতা মেনে
চলবে সেগুলো হলঃ
-
গর্ভবতী মায়েদের পূর্বের তুলনায় বিশ্রামের সময় বাড়াতে হবে।
-
সব সময় দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
- আরি কাজ করা যাবে না।
-
অনেক বেশি হাঁটাহাঁটি করা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা একদম ঠিক হবে না।
-
সেহরি এবং ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি পান
করতে হবে।
-
গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিক থাকলে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে
হবে।
-
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। দিনে কমপক্ষে দুই ঘন্টা এবং রাতে কমপক্ষে আট
ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
-
কোন সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রোজার সময় যেসব সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন সেগুলো হলোঃ
-
আপনার গর্ভের সন্তান যদি নড়াচড়া কম করে তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ
করতে হবে।
- যদি তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়।
-
আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম করার পরেও যদি ক্লান্ত অনুভব করেন।
-
মাথা ব্যথা এবং বমি হলে খুবই দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- জ্বর হলে।
-
ঘন ঘন প্রসাব হলে এবং প্রসাবে যদি জ্বালাপোড়া হয় তাহলে।
-
পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে।
সমসাময়িক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি?
উত্তরঃ গর্ভবতী মায়ের যদি কোন শারীরিক জটিলতা না থাকে এবং সকল দিক
থেকে সুস্থ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি রোজা রাখতে পারবেন।
প্রশ্নঃ রোজার কাফফারা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ রোজার কাফফারা বলতে বোঝায় যদি কেউ রোজা রাখতে না পারে বা কোন
কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় তাহলে সেই রোজার পরিবর্তে দুস্থ মানুষকে দুই বেলা
খাওয়ানো বা তার সমপরিমাণ টাকা দান করাকে কাফফারা বলে।
প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে রোজা রাখতে পারবেন। তবে
ইসলামের শরীয়তে গর্ভবতী মায়েদের রোজায় শিথিল করা হয়েছে। আপনি তাইলে রোজা
কাজা করতে পারেন এবং পরবর্তীতে সুস্থ হলে আপনি সেই তাজা রোজা আদায় করতে পারেন।
প্রশ্নঃ বাচ্চা দুধ খেলে কি রোজা হয়?
উত্তরঃ গর্ভবতী মায়েদের এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের রোজার ক্ষেত্রে
একই বিধান রয়েছে। যদি মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেয়ে থাকে তাহলে
আপনি সহজে রোজা করতে পারেন। তবে শুধুমাত্র বাচ্চা যদি আপনার বুকের দুধের
উপরে নির্ভরশীল হয় তাহলে আপনার রোজা রাখা উচিত হবে না।তবে রোজা রেখে শিশুকে
বুকের দুধ খাওয়ালে কোন ক্ষতি হয় না।
লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা
গর্ভাবস্থায় রোজার কাফফারা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় রোজা না করতে পারলে রোজার কাফফারা দেওয়ার প্রয়োজন হয়
না। শুধুমাত্র কাজা রোজা আদায় করলেই হয়ে যায়।গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা
গেলেও রোজা না রাখাই উত্তম। কারণ রোজা রাখার ফলে অনাগত সন্তান অপুষ্টি ও
কর্মজন নিয়ে জন্ম নিতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মায়ের ও শারীরিক জটিলতার
তৈরি হয়।
যদি রোজা রাখার কারণে মা অথবা বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা কোন কারনে
ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে রোজা না করাই ভালো। কারণ গর্ভবতী মায়েদের
জন্য ইসলাম করা হয়েছে।আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার
করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।বঙ্গ টিপস
আইটির সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বঙ্গ টিপস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url